ভূমিকাঃ
আধুনিক শিক্ষায় শিশুকেন্দ্রিকতা বলতে বোঝায়- “শিশুই হল সমস্থ শিক্ষাব্যবস্থায় কেন্দ্র বিন্দু।শিক্ষার্থীর সামর্থ্য,বুদ্ধি,আগ্রহ,রুচি,প্রক্ষোভ,চাহিদা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে যে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাকেই বর্তমানে শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা বলে”।এক কথায় শিশুই হল শিক্ষা প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদান।
১) মনস্তত্ব ভিত্তিকঃ
আধুনিক শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার মনস্তত্বের পরীক্ষিত তত্ত্বের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।শিক্ষার পদ্ধতি,শৃঙ্খলার ধারনা,পাঠক্রম ইত্যাদি সবকিছুই মনস্তত্বের দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
২)মুক্ত শৃঙ্খলাঃ
গতানুগতিক জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শৃঙ্খ্লার পরিবর্তে স্বতঃস্ফুর্ত শৃঙ্খলা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার এক বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য।
৩)সক্রিয়তাঃ
বর্তমানে সক্রিয়তা ভিত্তিক পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।শ্রেনীতে শিশুরা নিস্ক্রিয় হয়ে বসে না থেকে সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে।
৪)অবাধ স্বাধীনতাঃ
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিশুকে দিয়েছে অবাধ স্বাধীনতা।কোন কিছু বর্তমানে শিশুকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়না।শিশুরা তাদের আগ্রহ,পছন্দ এবং সামর্থ্য অনুসারে কাজকর্ম করতে পারে।
৫)ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন পদ্ধতিঃ
শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষায় প্রত্যেক শিশুকে তার নিজেস্ব ক্ষমতা আগ্রহ অনুসারে বিকাশের সুযোগ দেওয়া।শিক্ষক ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেক শিশুর উপর নজর দিয়ে থাকেন।তাঁর শিক্ষনের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ব্যক্তিতান্ত্রিক।
৬)সৃজনশীলতাঃ
নানা ধরনের হাতের কাজের মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশের চেষ্টা করা হয় শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায়।যেমন- কাগজের নানা ধরনের কাজ, মাটির কাজ,ফেলে দেওয়া জিনিষ দিয়ে নানা ধরনের কাজ ইত্যাদি।
৭)সমন্বয়িত পাঠ্যক্রমঃ
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় একাটি বৈশিষ্ঠ্য হল এর সমন্বয়িত পাঠ্যক্রম (Integrated Curriculum)।এই পাঠ্যক্রমে দার্শনিক,মনস্তাত্বিক,বৈজ্ঞানিক ও সমাজবিদ্যার সমন্বয় ঘটেছে।শিক্ষার বিভিন্ন তত্বকে কেন্দ্র করে পাঠ্যক্রম তৈরী হয়ে থাকে।
৮)শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কঃ
ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় গ্রহণ করার ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় ও মধুর হয়।বর্তমান শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীর বন্ধু ও পরামর্শদাতা।শিক্ষার্থীর নৈতিক চরিত্র গঠনে ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে শিক্ষক প্রয়োজনমত সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৯)আধুনিক শিক্ষোপকরনঃ
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার আর একটি বৈশিষ্ঠ্য হল শিক্ষার ক্ষেত্রে আধুনিক উন্নত শিক্ষোপকরনের ব্যবহার।যার মাধ্যমে শিক্ষাকে অনেক বেশী আগ্রহশীল ও আনন্দদায়ক করে তোলা যায়।যেমন- মন্টেসরি তে শিক্ষামূলক সারঞ্জাম(Deductive Apparatus),ফ্রয়েবেলের কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে উপহার(Gift)ইত্যাদি,উপকরন শিশুদের পক্ষে খুবই উপযোগী।
উপসংহারঃ
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমান কালে সবাই স্বীকার করে থাকেন।বিদেশে এ ব্যপারে বিশেষ চিন্তা ভাবনা চলছে এবং ভবিষ্যতে আশা করা যায় শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বিশেষ উন্নতি লাভ করবে। শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি একটি শিক্ষামূলক পরিবেশ তৈরির উপর জোর দেয় যা শিশুর চাহিদা, আগ্রহ এবং বিকাশের পর্যায়গুলিকে প্রভাবিত করে।এই পদ্ধতিটি প্রতিটি শিশুর স্বতন্ত্রতাকে স্বীকৃতি দেয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ সহ সামগ্রিক বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য রাখে।
শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষাই বাড়ায় না বরং প্রয়োজনীয় জীবন দক্ষতা, আত্ম-সম্মান এবং শেখার প্রতি ভালোবাসার বিকাশেও অবদান রাখে। প্রতিটি শিশুর অনন্য গুণাবলীকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং স্বায়ত্তশাসনের বোধকে উত্সাহিত করার মাধ্যমে, এই শিক্ষামূলক পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কৌতূহল, সৃজনশীলতা এবং স্থিতিস্থাপকতাকে লালন করে একটি গতিশীল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য প্রস্তুত করতে চায়।