ভূমিকা:
শিশু শ্রম ও শিশুর অপরাধ প্রবণতা—এই দুটি সমস্যা আজকের সমাজে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতে এই সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি এবং লক্ষ লক্ষ শিশু এখনও শ্রমে নিযুক্ত বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। শিশুশ্রম শিশুদের শৈশব, শিক্ষা ও স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত করে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করে তোলে। অপরদিকে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের অংশগ্রহণ শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবন নয়, সমাজের সার্বিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্যও হুমকি হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, শিশুর প্রতি শারীরিক, মানসিক, যৌন অবহেলা ও শোষণ তাদের স্বাস্থ্য, বিকাশ ও মর্যাদার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই সমস্যার সমাধানে আইন প্রণয়ন, সামাজিক সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য, যাতে প্রতিটি শিশু নিরাপদ, সুস্থ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন পেতে পারে।
WHO-এর সংজ্ঞা ও উদ্বেগ:
WHO শিশুর প্রতি যে কোনো ধরনের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা বা শোষণ—যা শিশুর স্বাস্থ্য, বিকাশ বা মর্যাদার ক্ষতি করে—তাকে Child Maltreatment বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই নির্যাতন পরিবার, অভিভাবক, শিক্ষক বা সমাজের অন্য কোনো কর্তৃত্বশীল ব্যক্তির দ্বারা ঘটতে পারে। WHO-এর মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি শিশু শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং এর ফলে বহু শিশু শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগে, এমনকি মৃত্যুবরণও করে।
WHO-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে—
“Child maltreatment, sometimes referred to as child abuse and neglect, includes all forms of physical and emotional ill-treatment, sexual abuse, neglect and exploitation that results in actual or potential harm to the child’s health, development or dignity.”
শিশু অপরাধ প্রবণতার কারণ ও প্রভাব:
শিশু শ্রম ও অবহেলা শিশুর অপরাধ প্রবণতার অন্যতম প্রধান কারণ। যখন শিশুদের মৌলিক অধিকার—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা—থেকে বঞ্চিত করা হয়, তখন তারা অপরাধের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে, শিশুদের প্রতি নির্যাতন, অবহেলা ও শোষণ তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তারা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
WHO-এর মতে, শিশুর প্রতি নির্যাতনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে—
- মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যহানি
- সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ব্যর্থতা
- অপরাধ প্রবণতার উত্তরাধিকার প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়া
শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করে।
ভারতের প্রেক্ষাপটে শিশুর অপরাধ প্রবণতা:
ভারতে শিশু অপরাধ প্রবণতা ক্রমবর্ধমান একটি সামাজিক সমস্যা। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৬-১৮ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি এবং প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০২১ সালে নাবালকদের বিরুদ্ধে ৩১,১৭০টি অপরাধের মামলা দায়ের হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য, পরিবারে সহিংসতা, মাদকাসক্তি, সামাজিক অবহেলা, অশিক্ষা এবং খারাপ সঙ্গ—এসবই শিশুদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ। শহরাঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা তুলনামূলক বেশি, এবং শিক্ষার অভাব ও পরিবারে অস্থিরতা এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করে। এছাড়া, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, অপসংস্কৃতি ও আইনের দুর্বল বাস্তবায়নও অপরাধ বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। ফলে, শিশুদের মৌলিক অধিকার, শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে এই সমস্যা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
WHO-এর সুপারিশ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
১. ইতিবাচক অভিভাবকত্ব ও পরিবারকে সহায়তা: শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। WHO সুপারিশ করে, অভিভাবকদের ইতিবাচক অভিভাবকত্ব, সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতা শেখানো জরুরি। এতে শিশুরা ভালোবাসা ও নিরাপত্তা পায়, অপরাধপ্রবণতা কমে এবং পরিবারে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়ক।
২. সহিংস শাস্তি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন: শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ অপরিহার্য। WHO-এর মতে, আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করলে অপরাধীরা শাস্তি পায় এবং সমাজে সচেতনতা বাড়ে। এতে শিশুরা নিরাপদ থাকে এবং সহিংসতার ঘটনা কমে যায়, ফলে শিশুদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা পায়।
৩. শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ: শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য। স্কুল, পরিবার ও সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে শিশুরা নির্ভয়ে বেড়ে উঠতে পারে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর ঝুঁকি কমে যায়। নিরাপদ পরিবেশ শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়ক।
৪. স্বাস্থ্যকর্মী ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণ: স্বাস্থ্যকর্মী ও সমাজকর্মীদের শিশু নির্যাতন চিহ্নিত ও মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। প্রশিক্ষণের ফলে তারা নির্যাতনের শিকার শিশুদের দ্রুত শনাক্ত করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারে। এতে শিশুরা দ্রুত পুনর্বাসিত হয় এবং তাদের মানসিক ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা: স্কুলে শিশুদের অধিকার, মূল্যবোধ ও আত্মরক্ষার শিক্ষা দেওয়া জরুরি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ালে তারা নিজেরা ও অন্যদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেষ্ট হয়। শিক্ষকদেরও শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
৬. সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা: গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রচার অভিযানের মাধ্যমে শিশু নির্যাতন ও অপরাধ প্রবণতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো যায়। মিডিয়া শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দেয়, যা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক এবং শিশুদের প্রতি সহিংসতা কমাতে কার্যকর।
৭. ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিং: নির্যাতনের শিকার বা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে তারা মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে থাকতে পারে। পুনর্বাসন ব্যবস্থা শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করে।
৮. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান: দারিদ্র্য ও সামাজিক বঞ্চনা শিশু অপরাধ প্রবণতার বড় কারণ। দরিদ্র পরিবার ও শিশুদের জন্য আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা হলে তারা অপরাধের পথে না গিয়ে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা শিশুদের অপরাধ থেকে দূরে রাখে।
৯. শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামতের গুরুত্ব: শিশুদের মতামত ও অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের চাহিদা, সমস্যা ও অভিজ্ঞতা জানার সুযোগ দিলে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শেখে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও অপরাধপ্রবণতা কমে যায়।
১০. INSPIRE ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়ন: WHO-এর INSPIRE ফ্রেমওয়ার্কে সাতটি কৌশল রয়েছে—যেমন আইন প্রয়োগ, সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তন, নিরাপদ পরিবেশ, পিতামাতার সহায়তা, আঘাতপ্রবণ শিশুদের সেবা, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সমর্থন। এই কৌশলগুলি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করলে শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সমাধানের পথ:
১. শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা: শিশুরা যেন যথাযথ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিকর খাদ্য, নিরাপদ আশ্রয় ও ভালোবাসা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে শিশুরা সহজেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব, প্রতিটি শিশুর অধিকার সুরক্ষিত করা এবং তাদের সুস্থ বিকাশের পরিবেশ গড়ে তোলা।
২. পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও সমাজের সদস্যদের মধ্যে শিশু অধিকার, অপরাধ প্রবণতার কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়লে শিশুর প্রতি সহিংসতা, অবহেলা ও শোষণ কমে আসবে। বিভিন্ন প্রচার, কর্মশালা ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে সবাই শিশুর সুরক্ষায় এগিয়ে আসে।
৩. বিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও মূল্যবোধ শিক্ষা: বিদ্যালয়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ শেখানো জরুরি। এতে শিশুরা সঠিক-ভুলের পার্থক্য বুঝতে শিখবে এবং আত্মসম্মানবোধ, সহানুভূতি ও সহনশীলতা অর্জন করবে। মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা শিশুরা মানসিক চাপ, হতাশা ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
৪. আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা: শিশুদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানো রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে দ্রুত বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজের সমন্বয়ে একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে।
৫. শিশুদের জন্য পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা: অপরাধে জড়িয়ে পড়া বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা শিশুদের জন্য পুনর্বাসন ও মানসিক কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরি। এতে তারা অপরাধের পথ থেকে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মানসিক আঘাত নিরাময় ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
৬. দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সহায়তা: দারিদ্র্য শিশু অপরাধ প্রবণতার অন্যতম বড় কারণ। দরিদ্র পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করলে শিশুরা শ্রম বা অপরাধে না গিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও এনজিও-র সহায়তায় দারিদ্র্য দূরীকরণে জোর দিতে হবে।
৭. শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি: শিশুরা যেন বাড়ি, স্কুল ও সমাজে নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতন থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠলে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং অপরাধপ্রবণতা কমে যায়।
৮. কিশোর অপরাধীদের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন: যেসব শিশু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করতে হবে। এতে তারা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। পেশাগত প্রশিক্ষণ ও জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা দিলে তারা অপরাধের পথ ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসবে।
৯. মিডিয়া ও সংস্কৃতির ইতিবাচক ভূমিকা: মিডিয়া ও সংস্কৃতিকে শিশু অপরাধ প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। টেলিভিশন, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে অপরাধ glorify না করে, নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করতে হবে। মিডিয়ার সচেতন প্রচার শিশুদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
১০. শিশু অধিকার সংক্রান্ত আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন: শিশু অধিকার সংক্রান্ত আইন যেমন—Juvenile Justice Act, Child Protection Act ইত্যাদির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আইন শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে কার্যকর হলে শিশুদের সুরক্ষা ও অপরাধ প্রবণতা রোধ সম্ভব। নিয়মিত নজরদারি ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
উপসংহার:
উপসংহারে বলা যায়, শিশু শ্রম ও শিশুর অপরাধ প্রবণতা—উভয়ই আমাদের সমাজের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। WHO-এর মতে, শিশুর প্রতি নির্যাতন ও অবহেলা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমগ্র সমাজের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলে। শিশুদের স্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ ও মর্যাদার ওপর এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হয়ে ওঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই, শিশুদের সুরক্ষা ও বিকাশ নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা রোধে কেবল আইন ও নীতি যথেষ্ট নয়; এর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা, মূল্যবোধ শিক্ষা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও জরুরি। শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে একটি সুন্দর, সহনশীল ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা। WHO-এর সতর্কবার্তা ও সুপারিশ আমাদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ, আনন্দময় শৈশব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে। তাই, প্রতিটি শিশুর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সকলেরই সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত।
রেফারেন্স:
- Kumar, R. (2018). Child Labor and Juvenile Delinquency in India. New Delhi: Sage Publications.
- Sharma, P. (2020). Social Issues in India: Child Rights and Protection. Mumbai: Oxford University Press.
- Das, S. (2017). Juvenile Justice and Child Welfare. Kolkata: Routledge India.
ওয়েবসাইট:
- World Health Organization. (2023). Child Maltreatment. Retrieved from https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/child-maltreatment
- National Crime Records Bureau. (2024). Juvenile Justice in India. Retrieved from https://ncrb.gov.in/en/juvenile-justice
- Ministry of Women and Child Development, India. (2023). Child Rights and Protection. Retrieved from https://wcd.nic.in/child-rights
📖 ব্লগ পোস্টটি ডাউনলোড করুন
নিচের বাটনে ক্লিক করে পিডিএফ ডাউনলোড করুন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে সাপোর্ট করুন!
✅ সাবস্ক্রাইব করলে ভবিষ্যতে আরও ফ্রি কন্টেন্ট পাবেন!