ভারতে নারী শিক্ষার ইতিহাস ও ক্ষমতায়নের ধারা (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ)

প্রাক্ কথন

শিক্ষা হল আত্মার মুক্তি।আত্মার অর্থ হল চেতনা।সেই কারনেই বলা হয় শিক্ষা আনে চেতনা,চেতনা আনে মুক্তি।এই বিশ্বে যে কোন মহৎ সৃষ্টির পিছনে নারীদের অবদান রয়েছে,তা অনস্বিকার্য।তাই নারীওদের কে বাদ দিয়ে কোন শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলোচনা পরিপূর্ণ হতে পারেনা।সাধারনত ধর্ম বলতে আমরা হিন্দু সনাতন,বৌদ্ধ,খৃষ্টান,ইসলাম,শিখ,জৈন প্রভৃতি কে বুঝি।কিন্তু এই সব প্রত্যেক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ গুলি যদি দেখা যায় ,সেখানেও প্রাক্- প্রাচীন কাল থেকে নারী শিক্ষার প্রভাব সুস্পষ্ট।বিশ্বের সমগ্র ধর্মগ্রন্থ গুলিতে নারী জাতীকে বিশেষ ভাবে  অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। 

ঐতিহাসিক দের মতে প্রাচীনকালে বন্য পরিবেশে নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করতো।এদের বন্য পরিবেশে জীবন যাপন বন্য পশুর মতো ছিলো।তারা বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো,ফলমূল,গাছের পাতা ও পশুর কাঁচা মাংস খেতো।এই বন্য পরিবেশেও নারী দের ভূমিকা ছিলো পুরুষ দের সমান।তাহারা দল বেঁধে বাস করত।তাই পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও পশু শিকার,ফলমূল সংগ্রহ,সন্তান প্রস্বব ও লালন পালন এবং নিজেদের আত্মরোক্ষা করত। যুগ যুগ ধরেই মায়েদের ক্ষমতার ও সাহসিকতার বলেই সন্তানেরা স্বতঃস্ফুত্ব ভাবে চলাফেরা করতে পারে। কি উপায়ে শত্রু পক্ষ্য কে হারিয়ে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে থাকা যায়,তা শিশুরা মায়েদের কাছথেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।প্রস্তর যুগেও নারীর স্থান ছিলো সবার উপরে।আমরা যদি ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে তাকাই,তবে দেখব যে  নারী পরুষ উভয়েই মিলিত হয়ে পাথরের অস্ত্র তৈরী করতো।

তাছাড়া গুহায় বসবাস কালে আদিম মানুষের অঙ্কিত অনেক গুহা চিত্র দেখা যায়,যেখানে নারীরা পশু শিকার করছে,আত্মরক্ষা করছে,সন্তান সন্ততি দের কে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছে।সুতরাং এই সময় নারীর ক্ষমতা ও বিচার বুদ্ধি ছিলো পুরুষদের সমপর্যায়ে।  

 

 বিশ্বে বিভিন্ন সভ্যতায় নারীর অবস্থানঃ

ই কথা আমরা সকলে অবগত যে,সুমেরীয় সভ্যতা ছিল প্রাচীন একটি সভ্যতা।পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা ছিল একটি অন্যতম সভ্যতা।সুমেরীয় সভ্যতা ছিল মূলত কৃষি ভিত্তিক।কৃষিকাজে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমান তালে তাল রেখে অংশ গ্রহণ করত।ফসল ফলাবার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জল নিকাষী ব্যবস্থা,চাষের জমি তৈরী,কৃষিকাজ,গৃহ নির্মানে পু্রুষদের পাশাপাশি নারীরদের ভূমিকার অনেক প্রমান ইতিহাসে পাওয়া গেছে। 

সুমেরীয় সভ্যতার মত মিশরীয় সভ্যতা ছিল পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম।মিশরীয় সভ্যতায় “মেন কাউরে,খাফরে,খুফু,টুটেন খামেন,দ্বিতীয় রামেসে,নারমার মেনেস,হামমুরারি” প্রভিতি মহারাজাদের নাম যেমন পাওয়া যায় তেমনি “ফারাও খূফুর মা হেতেপ হারেস,রানী নেফারটিটিপ্রভিতি বিদূষি মহিলাদের নাম ও পাওয়া যায়।নারীদের মধ্যে রানী নেফারটিটির ভূমিকা চীরস্বরনীয়।

মিশরীয় ইতিহাসে রানী নেফারটিটি রাজকার্যের গুরুত্বপূ্র্ণ সিন্ধান্ত গুলি অন্যদের সাথে নিতেন এবং কখনো কখনো রাজা চতুর্থ আমেন হোটপের সাথে রাজকার্যে অংশ গ্রহণও করতেন।আবার কখন,নেফারটিটি বীরঙ্গনাদের মতযুদ্ধে গদা নিয়ে যুদ্ধ  করতেন।মিশরীয় দেওয়াল চিত্রে দেখাযায় রানী নেফারটিটি চিত্র কলায় ব্যস্ত রয়েছেন।গ্রীস সভ্যতার ইতিহাসে জানা যায় যে সেই সময় মহিলারা বিভিন্ন চিত্রকলা,স্থাপত্য বিদ্যা ও ভাস্কার্যে পুরুষদের পাশাপাশি অংশ গ্রহণ করতেন।তাছাড়া গ্রীক স্থাপত্য কলাতে যেসব দেওয়াল চিত্র পাওয়া যায় সেখানে দেখাযায় নারী নেফারটিটি বিভিন্ন কাজে কর্মরত। 

প্রাচীন ভারতে নারীর মর্যাদাঃ

খ্রীষ্টপূর্ব দশ শতকের (খ্রীঃ পূঃ ১০০০) পূর্বে কোন এক সময়ে আর্যরা দলে দলে সীমান্ত গিরিপথ অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন।ভারতে যারা এসেছিল তারা ইতিহাসে ইন্দো-এরিয়ান(Indo-Aryan)নামে পরিচিত।আজ থেকে প্রায় পাঁচ-সারে পাঁচ হাজার বছর আগে পারস্যের মালভূমির গায়ে লাগা বালুচিকিস্থানের পাহাড়ি অঞ্চলের গ্রাম-গুলিতে মানুষের বসবাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।একে আমরা সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা বা সিন্ধু সরস্বতী সভ্যতা বলে জানি। সিন্ধু সভ্যতায় নারীদের ভূমিকা অধিকাংশেই পুরুষদের সমানুপাতিক। প্রাক্-বৈদিক যুগের সমাজে নারীরাও যাগ-যজ্ঞে অংশগ্রহণ করতেন। সেই সময় সমাজে উপাধ্যায়ের পাশাপাশি মহিলা ঋষিষা বা ব্রক্ষ্মবাদিনী’’ ছিল।এমনি কিছু ব্রক্ষ্মবাদিনী হলেন-

 রোমাসা,লোপামুদ্রা,ঘোষা,অপলা,কান্দ্রু,কামায়নী,শ্রদ্ধা,সাবিত্রী,উর্বশী,দেবযানী এবং গৌপায়ানাইত্যাদি। বৈদিক যুগে ও মহাকাব্যের যুগেও শাস্ত্র রচনাতেও নারীর উল্লেখযোগ্য স্থান ছিল।কাৎকৃষ্ণের মিমাংসা,অপিশালীর অর্থশাস্ত্র, কার্শকাৎষ্ণীর ব্যকারন ইত্যাদি সে যুগের উল্লেখ যোগ্য উদাহরণ।এছাড়াও মহাকাব্যের যুগে অস্রবিদ্যায় চিত্রঙ্গদা,রথচালনায় সুভদ্রা,সুকুমার কলায় দ্রৌপদী,বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।মহাকাব্যের যুগে আজকালকার নারী সমিতির মতো তৎকালিন সময়েও অযোধ্যায় “বধূ সংঘের প্রমান পাওয়া যায়।

পর দিকে সনাতন হিন্দু ধর্মের ন্যায় বৌদ্ধ ধর্মেও বৌদ্ধ ভিক্ষুনীদের জন্য পৃথক বিহার বা “সঙ্গারামের কথা গৌতম বুদ্ধ উল্লেখ করেছেন ।বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক,মহাজান ও হীনজান বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকের মাধ্যমে জানা যায়,বৌদ্ধ ভিক্ষুনীদের আট থেকে বারো বছর পর্যন্ত সঙ্গারামে থাকতে হত এবং এদের কে শিক্ষামানা বলে অভিহিত করা হত।বৌদ্ধ যুগে বিদুষী ভিক্ষুনীরা হলেন-

সুলভা,শ্রমনীশরবী,অম্রপালী,সুপ্রিয়া,উপ্পলা,সুজাতা,মহাপ্রজাপ্রতি,গৌতমী, ক্ষেমা,সোমা  

অনুপমা ইত্যাদি।এছাড়াও ভিক্ষুনীদের কাব্য সাহিত্য “থেরীগাথাও যথেষ্ট গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠীত।

মধ্যযুগের ভারতের নারীর যোগ্যতাঃ

সলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহাম্মদনারীদের শিক্ষার আবশ্যিক বলে উল্লখেক  করছেন।খ্রীষ্টীয় দ্বাদশ শতক হল ভারতে  মুসলিম সভ্যতার উন্মেষ কাল।এই সময় সুলতান গিয়াসুদ্দিনসর্বপ্রথম নারি শিক্ষার জন্য মহিলা বিদ্যালয় স্থাপন করে মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ করেন।মুসলিম যুগে নারী শিক্ষা সংকীর্ন হলেও এযুগের কয়েক জন বিদুষী মহিলারা হলেন ফতেমা,হামিদা,সোফিয়া,গুলবদনবেগম,হামিদাবানু,মমতাজ, জেবউন্নিসা,জাহানারা,বদরুন্নেসা,ইত্যাদি। এছাড়াও মধ্যযুগে কিছু উল্লেখযোগ্য হিন্দু রমণী ছিলেন। তারা হলেনরানী দূর্গাবর্তী,মীরাবাঈ ইত্যাদি। গুলবদন বেগমেরহুমায়ুন নামামধ্যযুগের একটি উচ্চ প্রসংশিত পুস্তক।

পাক্- স্বাধীনতা যুগে ভারতে নারীর শিক্ষাঃ

ষ্টাদশ শতাব্দীতে মুসলিম সাম্রাজ্যের পতনের মধ্যদিয়ে ইংরেজ শাষন ব্যবস্থার সূচনা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এদেশে নারী শিক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিলনা।তবে ১৮০০খ্রীঃ উইলিয়াম কেরী,মার্শম্যান ও ওয়ার্ড একত্রে শিক্ষার বিকাশ ঘটেছে।নিরক্ষরতা ও অন্ধ কুসংস্কার থেকে নারী জাতি কে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে মিশনারি(শ্রীরামপুর ত্রয়ী)গন ৩১টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।এছাড়া শ্রীরামপুর ত্রয়ীর উদ্ধগে বালিকাদের জন্য ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটিস্থাপন করেছিলেন।১৮৮৯খ্রীঃ বেথুন সাহেব ও দক্ষিনারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বাঙ্গালী শিক্ষাব্রতীদের চেষ্ঠায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়স্থাপন করেন যা পরবর্তী কালে ১৮৮৭ খ্রীঃ মহিলা কলেজে’’ রূপান্তরিত হয়।রাধাকান্ত দেব শোভাবাজারে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি প্রগতিশীল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রধান অগ্রদূত এবং পথিকৃৎ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।তিনি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মেয়েদের জন্যে ৩৫টি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার চিঠিতে লিখেছেন- আমি আর যতদিন বাঁচবো সেই সময়টা দেশের ছেলে-মেয়েরা যাতে লেখাপড়া শিখে মানুষ হয় তার জন্য চেষ্টা করবো।আর আমার সেই ব্রত আমার মৃত্যুর পরে আমার শ্মশানের ছাইয়ে মিশে সার্থক হবেনারী শিক্ষা প্রসঙ্গে-স্বামী বিবেকানন্দবলেছেন- “If is in The hands of Educated and pious mothers that great man are born.” তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষনা করেন,-“যে দেশ নারীকে শ্রদ্ধা করেন সেই দেশে বা জাতি কখনও বড়ো হতে পারনা বিবেকানন্দের নারী শিক্ষার প্রসারে ভারত সেবাশ্রম সংখ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।১৮৫৪ খ্রীঃ উডের ডেসপ্যাচে নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে বলা হয়-ভারতে নারী শিক্ষার ব্যবস্থা ব্যাতিরেকে জন শিক্ষা্র অগ্রগতি হতে পারেনা।

হান্টার কমিশন ১৮৮২-৮৩ সালে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয় গুলিকে উদার ভাবে সাহায্য দেবার পরামর্শ দেন।ভারতে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে ১৯০৫-১৯২০ খ্রীঃ নারী শিক্ষার প্রসারে অধীক গুরুত্ব দেওয়া হয় ১৯০৪খীঃ শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের চেষ্টায় বেনারসে সেন্টাল হিন্দু গালর্স কলেজপ্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯১৩ খ্রীঃ শ্রীমতি পাব্বর্তী আম্মা চন্দ্র শেখর আয়ার মহিলা সেবা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।১৯১৬ খ্রীঃ মেয়েদের চিকিৎসা বিদ্যা শেখার জন্য দিল্লিতে,‘লেডি হা্র্ডিঞ্ছ মেডিক্যাল কলেজপ্রতিষ্ঠিত হয়।এই সময় প্রথম “ইন্ডিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় পুনেতে।

তৎকালিন দেশিয় শিক্ষায় নারীর অবস্থানঃ

১৮৩৫ খ্রীঃ অ্যাডামের দ্বিতীয় বিবরণীতে বাংলাদেশের নাটোর জেলার নারী – পুরুষের শিক্ষিত হার ছিলো ৩.১ শতাংশ। ১৮৩৮ সালে অ্যাডাম তার সর্বশেষ বিবরণীতে বাংলা,বিহার ও ত্রিহুতের চিত্র তুলে ধরেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করছি-  

জেলাবিদ্যালয়ের সংখ্যা(সর্বমোট)শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়
মুর্শিদাবাদ১১২ টি১টি
বীরভূম৫৪৩ টি১টি
বর্দ্ধমান৯২৭ টি৪টি
দক্ষিণ বিহার৬০৫ টিনেই
ত্রিহুত৩৭৪ টিনেই
মোট =২৫৬১টি৬টি

 বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার চিত্রঃ 

জেলাছাত্রের সংখ্যাছাত্রীর সংখ্যা
মুর্শিদাবাদ১৩৬৮টি২৮টি
বীরভূম৭৩৩৯টি১১টি
বর্দ্ধমান১৫৬৩৯টি১৭৫টি
দক্ষিণ বিহার৫০৩৬টি
ত্রিহুত১৩টি
মোট =৩০৭০১টি২১৪টি

স্বাধীনতা পরবর্তী কালে নারীর শিক্ষাঃ

১৯৪৭ সালে ১৫ই আগষ্ট দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই নারী শিক্ষার ব্যাপক আয়োজন শুরু হয় সারা দেশ জুড়ে।ভারতীয় সংবিধানে ১৯৫৩ সালে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান ক্ষমতার অধিকার স্বীকৃ্ত্ব হয়।মুদালিয়র সম্পর্কে দুইটি অভিমত পেশ করেন।

 এক, মেয়েদের শিক্ষা ছেলেদের শিক্ষা থেকে পৃথক হবে।এবং

 দুই, শিক্ষা ছেলেরই হোক আর মেয়েরই হোক,সমাজ ও গৃহের সঙ্গে শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক থাকা চাই।

কমিশনের মত হল গাহার্স্থ্য বিজ্ঞানের শিক্ষা পেলে মেয়েরা পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব্য পালনে সক্ষম হবে।নারীদের স্বনির্ভর প্রসঙ্গে ১৯৬৭খ্রীঃ নারী শিক্ষা জাতীয় পষর্দ শ্রীমতি হংসরাজ মেহেতার সভানেতৃ্ত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়।সেখানে প্রধান বিষয় হল- মেয়েদের জন্য পৃথক পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সুশিক্ষা পেলে নিজে স্বনির্ভর হতে পারে।জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ১৯৮৬ সালে বলাহয়- সর্বপ্রকার বৈষাম্য দূরকরে সকলের জন্য সমান সুযোগ।জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ১৯৮৬তে আরো বলা হয়।–“Education will be used as an agent of basic change in the status of woman.

 বর্তমান ভারতে অধিকাংশ রাজ্যেই,শহর ও পল্লী অঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষা অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক করা হয়েছে এবং নারী শিক্ষা কল্পে বহু মহিলা বিদ্যালয়,কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।কিন্তু  তবুও আশানুরুপ উন্নতি হয়নি।শিক্ষা ক্ষেত্রে মহিলারা অনেক খানি পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছে।নিম্নে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরছি-

জনগণনা ২০০১
মোট শিক্ষিত জনসংখ্যাগ্রামেশহরে
পুরুষ = ৭৫.২৬%পুরুষ = ৭০.৭০%পুরুষ = ৮৬.২৭%
মহিলা = ৫৩.৬৭%মহিলা = ৪৬.১৩%মহিলা = ৭৩.৮৬% 
মোট জনসংখ্যা=৬৪.৮৪%মোট = ৫৮.৭৮%মোট = ৭৯.৯২% 

 

জনগণনা ২০১১
মোট শিক্ষিত জনসংখ্যাগ্রামেশহরে
পুরুষ = ৮০.৮৯%পুরুষ =  ৭৭.১৫%পুরুষ = ৮৮.৭৬%
মহিলা = ৬৮.৬৮%মহিলা = ৫৭.৯৩%মহিলা = ৭৯.১১%
মোট জনসংখ্যা= ৭২.৯৩%মোট = ৬৭.৭৭%মোট = ৮৪.১১%

উপসংহারঃ

২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভারতের নারী-পুরুষের অনুপাত ৪৮:৫০ কটিতে।চাকুরীরত মেয়েদের সংখ্যাও কয়েক দশকের মধ্যে খুব একটা বেশী বৃদ্ধি পায়নি।শহর অঞ্চলে খানিকটা হলেও গ্রাম অঞ্চলে খুবই কম।অবশ্য আজকাল অনেক শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ মনে করেন জে,শিক্ষা। চাকুরী, সামাজিক মর্যাদা ও অনান্য সুযোগ সবিধার ব্যাপারে নারী পুরুষের প্রভেদ থাকা অন্যায়।

দেশ স্বাধীন হবার পর, প্রাথমিক স্তরে ছাত্রীর সংখ্যা যথেষ্ঠ বৃদ্ধি পেয়েছে.১৯৫০-৫৬ সালে ভারতের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে প্রায় ৭৫ লক্ষ মেয়ে শিক্ষা পেয়েছে।তবে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষারও বিস্তার ঘতেছে।ভারতের বিভিন্ন রাজ্য গুলিতে শিক্ষার সুযোগের তারতম্য থাকের ফলে কেরালা,তামিলনাড়ূ,অন্ধ্রপ্রদেশ এবেং পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের শিক্ষার হার বিহার, আসাম,উড়িষ্যা,রাজস্থান,উত্তরপ্রদেশ,মধ্যপ্রদেশ,অরুনাঞ্চল প্রদেশের মেয়েদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে খ্রীষ্টান ও পার্শী মহিলারা মুসলিম ও হিন্দু মহিলাদের থেকে শিক্ষায় অনেক এগিয়ে।তবে দূর ভবিষ্যতে নারীদের শিক্ষার মান ও মর্যাদা আরো কতটা এগিয়ে যায় তা এখন দেখার।

তথ্যসূত্রঃ

   1)    মনোরমা ইয়ারবুক ২০০৭(বাংলার নারী শিক্ষা- পার্থ সারথি দে,পৃষ্ঠা- ৭০)

   2)   রহস্যময়ী নেফারটিটি (প্রচ্ছেদ কাহিনি-আনন্দমেলা ৫ সেপ্টঃ ২০১০)

   3)   শিক্ষণ প্রসঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) গৌরদাস হালদার (ব্যানার্জী পাবলিকেশন্)

   4)   ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাস ও সাম্প্রতিসমস্যা- জ্যোতিপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।

   5)   ভারতের শিক্ষা ও শিক্ষায় ভারতায়ন- সুশীল রায়। এবং ইন্টারনেট।

*****

📖 ব্লগ পোস্টটি ডাউনলোড করুন

নিচের বাটনে ক্লিক করে পিডিএফ ডাউনলোড করুন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে সাপোর্ট করুন!

✅ সাবস্ক্রাইব করলে ভবিষ্যতে আরও ফ্রি কন্টেন্ট পাবেন!

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top

Discover more from DAS Coaching

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading